rupkatha-png
ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব না অসম্ভব ?
সাত দশমিক সাত মাত্রার বিধ্বংসী ভূমিকম্পে মায়ানমারের মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। আজ সকাল পর্যন্ত প্রাণহানির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে বলে সেদেশের সেনা সূত্রে খবর। বিপর্যয়ের কারণে এই সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। আহত হয়েছেন দু হাজার ৩৭৬ জন। সবচেয়ে বেশি হতাহতের সন্ধান মিলেছে সেদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালায়। গতকালের ঐ ভূমিকম্পের পর একাধিকবার আফটার শক অনুভূত হয়।

অপারেশন ব্রহ্মা-র অধীনে ভারতের পক্ষ থেকে পাঠানো প্রায় ১৫ টন ত্রাণ সামগ্রী ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মায়ানমারের ইয়াংগং-এ পৌঁছেছে। হিন্ডন বিমানঘাঁটি থেকে তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগ, কম্বল, শুকনো ও তৈরি খাবারের প্যাকেট, জেনারেটর সেট সহ প্রয়োজনীয় ত্রান সামগ্রী ভারতীয় বায়ু সেনার সি – ওয়ান থারটি জে বিমানটি আজ সেদেশে পৌঁছয়। সেখান থেকেই আজ আরও দুটি বিমান, ত্রাণ সাহায্য সহ সেদেশের উদ্দেশে রয়না দেবে। পাঠানো হচ্ছে প্যারাসিটামল, অ্যান্টিবায়োটিক সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ওষুধপত্র, সিরিঞ্জ, গ্লাভস ও ব্যান্ডেজও। সামাজিক মাধ্যমে এক বার্তায় বিদেশ মন্ত্রী ডক্টর জয়শঙ্কর বলেছেন, এই বিমানে একটি অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল এবং চিকিত্সক দল সেখানে যাচ্ছে। সরকার সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর নিরন্তর নজর রেখে চলেছে। এব্যাপারে কি কি সাহায্য আরও করা যায়, তা পর্যালোচনা করা হবে। মায়ানমারের ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে, অত্যন্ত দ্রুত সহায়তা পোঁছে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সেখানকার ভারতীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে দূতাবাস যোগাযোগ রেখে চলেছে। যেকোনো রকম প্রয়োজনে খোলা হয়েছে জরুরী টেলিফোন লাইন। এদিকে অন্যান্য দেশ থেকেও আসছে সাহায্য। রাশিয়ার জরুরী পরিষেবা মন্ত্রক ১২০ জন উদ্ধারকারী এবং ত্রাণ সাহায্য সহ দুটি উড়ান সেদেশে পাঠিয়েছে। চীনের ইউনাম থেকে ৩৭ সদস্যের একটি দল আজ সকালে ইয়াংগং পৌঁছন। ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকায় সাহায্য পৌঁছে দিতে আরও ৫০ জন আগামীকাল সেখানে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সহায়তা বাবদ ৫০ লক্ষ ডলার অর্থ সাহায্য পাঠানো হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সবথেকে বড় প্রশ্ন ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব না অসম্ভব ?

ভূমিকম্পের সঠিক সময়, স্থান ও মাত্রা আগেভাগে নির্ভুলভাবে পূর্বাভাস দেওয়া বর্তমানে সম্ভব নয়। তবে কিছু পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি ও গবেষণার মাধ্যমে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

কেন সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন? ভূমিকম্পের জটিল প্রক্রিয়া – ভূমিকম্প মূলত ভূগর্ভস্থ টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়ার ফলে হয়, যা অনেক অনির্দেশ্য। পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব – ভূমিকম্পের সুনির্দিষ্ট লক্ষণ নেই যা নির্ভরযোগ্যভাবে পূর্বাভাসের জন্য ব্যবহার করা যায়। প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা – বর্তমান প্রযুক্তি ভূকম্পন-সংক্রান্ত মাত্র কিছু আগাম সংকেত (যেমন, ছোট ছোট কম্পন, গ্যাস নির্গমন) ধরতে পারলেও সেগুলো নির্ভরযোগ্য নয়।

কীভাবে ভূমিকম্পের ঝুঁকি নির্ধারণ করা হয়? ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের মানচিত্র তৈরি করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়। সিসমোমিটার ও জিওফিজিক্যাল পর্যবেক্ষণ ব্যবহারে ভূকম্পনের হার ও প্রবণতা বিশ্লেষণ করা হয়। এআই ও বিগ ডাটা মডেলিং – গবেষকরা বিভিন্ন উপাত্ত ব্যবহার করে সম্ভাব্য ঝুঁকি বিশ্লেষণের চেষ্টা করছেন।

কিছু বিশেষ গবেষণা ও উদ্যোগ: জাপান ও চীন ভূমিকম্প পূর্বাভাস নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং তারা কিছু নির্দিষ্ট ভূমিকম্প আগেভাগে শনাক্ত করতে পেরেছে, তবে তা এখনো নির্ভরযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছায়নি। সিসমিক আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম – যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ও মেক্সিকোতে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, যা ভূমিকম্প শুরু হওয়ার কয়েক সেকেন্ড বা মিনিট আগে সতর্ক করতে পারে। বর্তমানে ভূমিকম্পের নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া অসম্ভব, তবে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল ও ঝুঁকি সম্পর্কে তথ্য জানা গেলে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। ভবিষ্যতে উন্নত প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে সঠিক পূর্বাভাস দেওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।