আমরা প্রায়শই ক্রীড়াক্ষেত্রে অসাধারণ কীর্তির উদাহরণ দেখি, যেখানে খেলোয়াড়রা নিজেদের অসাধারণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেন। কিন্তু আসল অনুপ্রেরণা আসে সেইসব গল্প থেকে যেখানে খেলোয়াড়রা ব্যর্থতা কাটিয়ে সফলতার শিখরে পৌঁছান। এখানে তেমন ১০টি অনুপ্রেরণামূলক গল্প দেওয়া হলো:
১) গ্লেন কানিংহাম
একজন স্কুল ছাত্র ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারাত্মক আহত হন। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, তিনি হয়তো বাঁচবেন না, আর বেঁচে গেলেও সারাজীবন চলাফেরায় অক্ষম থাকবেন। কিন্তু তিনি দমে যাননি। হাঁটা শেখার চেষ্টা চালিয়ে যান এবং ধীরে ধীরে দৌড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করেন। অবশেষে, ১৯৩৪ সালে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে তিনি বিশ্বের দ্রুততম মাইল দৌড় সম্পন্ন করেন। পুরোটা জানুন
২) মাইকেল জর্ডান
একবার স্কুল বাস্কেটবল দলে সুযোগ না পেয়ে হতাশ হলেও, তিনি হাল ছাড়েননি। কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজেকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাস্কেটবল খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার উক্তি – "আমি আমার ক্যারিয়ারে ৯০০০ এর বেশি শট মিস করেছি, ৩০০ টির বেশি ম্যাচ হেরেছি, ২৬ বার গেমের গুরুত্বপূর্ণ শট মিস করেছি, কিন্তু আমি চেষ্টা করতে কখনো থামিনি – আর এটাই আমার সফলতার রহস্য।" পুরোটা জানুন
৩) সন্দীপ সিং
২০০৬ সালে ভারতের হকি খেলোয়াড় সন্দীপ সিং এক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। তিনি প্রায় দুই বছর হুইলচেয়ারে কাটান। কিন্তু কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি মাঠে ফিরে আসেন এবং ভারতীয় দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
৪) বেব রুথ
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিখ্যাত বেসবল খেলোয়াড় বেব রুথ একসময় সবচেয়ে বেশি আউট হওয়ার রেকর্ড গড়েছিলেন। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। বরং, কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা হোম রান খেলোয়াড়ে পরিণত করেন। তার দর্শন ছিল – "প্রতিটি আউট আমাকে পরবর্তী হোম রান-এর আরও কাছাকাছি নিয়ে যায়।"
৫) রবীন্দ্র জাদেজা
মাত্র ১০ টাকার সাহায্যে দিন পার করা জাদেজার পরিবার খুবই গরিব ছিল। তার বাবা ছিলেন একজন নিরাপত্তারক্ষী এবং মা ছিলেন নার্স। ১৭ বছর বয়সে মাকে হারানোর পর তিনি ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করে ভারতীয় দলে জায়গা করে নেন এবং সফল অলরাউন্ডার হিসেবে পরিচিত হন।
৬) মিলখা সিং
ভারতের বিখ্যাত দৌড়বিদ মিলখা সিং একসময় ডাকাত হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেখান থেকেই তার দৌড় প্রতিভা বিকশিত হয় এবং পরবর্তীতে তিনি ভারতীয় ক্রীড়া ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অ্যাথলেট হিসেবে পরিচিত হন।
৭) মনসুর আলী খান পাতৌদি
২০ বছর বয়সে এক দুর্ঘটনায় তিনি তার একটি চোখ হারান। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি এবং এক চোখে অনুশীলন করে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ও অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
৮) মহেন্দ্র সিং ধোনি
ক্রিকেট খেলার আগে ধোনি ভারতীয় রেলের টিকিট পরীক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। তবে তিনি স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেননি। কঠোর পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে তিনি ভারতের অন্যতম সফল অধিনায়ক হয়ে ওঠেন।
৯) মার্ক কিউবান
একজন দল-মালিক হলেও মার্ক কিউবান নিজেই এক অনুপ্রেরণা। একসময় তিনি কাঠমিস্ত্রি, রাঁধুনি ও ওয়েটারের কাজ করতেন, কিন্তু একাধিকবার ব্যর্থ হলেও তিনি হাল ছাড়েননি। পরে তিনি এনবিএ’র ডালাস মাভেরিক্সের মালিক হয়ে ওঠেন। তার দর্শন – "তুমি কতবার ব্যর্থ হলে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, তুমি একবার সঠিকভাবে করলে সেটাই যথেষ্ট।"
১০) স্ট্যান স্মিথ
একসময় তাকে বলবয় হিসেবে পর্যন্ত নেওয়া হয়নি, কারণ তিনি খুব অদক্ষ ছিলেন। কিন্তু তিনি কঠোর পরিশ্রম করে উইম্বলডন, ইউএস ওপেনসহ আটটি ডেভিস কাপ জেতেন এবং ইতিহাসের অন্যতম সফল টেনিস খেলোয়াড় হন।
এগুলো ছিল সেইসব ক্রীড়াবিদদের গল্প, যারা ব্যর্থতা কাটিয়ে নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এই গল্পগুলো আমাদের শেখায় – কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস ও অধ্যবসায় থাকলে যেকোনো বাধা জয় করা সম্ভব!
