মহা শিবরাত্রি শুধুমাত্র একটি পূজা বা বিশেষ দিন নয়, মহা শিবরাত্রি, শিশুদের, এমনকি সকল বয়েসের মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। আমাদের পৌরাণিক মতে "শিব" শব্দের অর্থ "আদি শক্তি" বা সংক্ষেপে "শক্তি" যা সর্বদা শুভ, দয়ালু, মহৎ, এবং মঙ্গলময়। এই শক্তি আবার অশুভ শক্তির বিনাশের প্রতীকও হয়।
তাই সকল মানুষের মধ্যে যে মূল্যবোধ, ভক্তি এবং আভ্যন্তরীণ শক্তি আছে তার চেতনাবোধ গঠনে শিবরাত্রির অসীম প্রভাব আছে।
নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো:
১. মানসিক ভক্তি ও বিশ্বাসের বিকাশ ঘটায়-
শিশুরা প্রার্থনা, ভক্তি এবং ভগবান শিবের সাথে সংযোগ স্থাপনের গুরুত্ব শেখে, যা তাদের আধ্যাত্মিক যাত্রায় বিশ্বাস ও শৃঙ্খলা গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
২. ধ্যান ও আভ্যন্তরীণ শান্তির শক্তি শেখায়-
শিব সর্বোচ্চ যোগী ও ধ্যানী। মহা শিবরাত্রি পালনের মাধ্যমে শিশুরা ধ্যানের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে, যা তাদের মানসিক শান্তি, মনোযোগ এবং আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হয়।
৩. নৈতিক মূল্যবোধ ও সত্যনিষ্ঠার শিক্ষা দেয়-
"সত্যম শিভম সুন্দরম" শিব সত্য, বাকি সব মিথ্যা এর উপলব্ধি করা। শিবের কাহিনিগুলি শিশুদের সততা, দয়া এবং ন্যায়বিচার বজায় রাখতে অনুপ্রাণিত করে।
৪. আত্মনিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বৃদ্ধি করে-
অনেকেই মহা শিবরাত্রিতে উপবাস করেন এবং রাতভর প্রার্থনা করেন। এটি শিশুদের ধৈর্য, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং অপ্রয়োজনীয় আকাঙ্ক্ষাগুলোর ওপর সংযম রাখতে শেখায়, যা তাদের ইচ্ছাশক্তি শক্তিশালী করে।
৫. সত্যের বিজয়ের প্রতীক-
শিব হলেন সমস্ত নেতিবাচক শক্তির বিনাশকারী। মহা শিবরাত্রি শিশুদের শেখায় কীভাবে তারা ভয়, নেতিবাচকতা এবং খারাপ অভ্যাসকে পরাস্ত করতে পারে এবং ইতিবাচকতা ও আত্মোন্নয়ন গ্রহণ করতে পারে।
৬. সৃষ্টি ও মহাজাগতিক শক্তির চেতনার বিকাশ -
শিব সম্পর্কে গল্প ও আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুরা মহাজাগতিক শক্তির ধারণা বুঝতে পারে, যা সৃষ্টি, বিনাশ ও রূপান্তরের প্রতীক, এবং জীবনকে একটি অবিরত শেখার ও বিকাশের চক্র হিসেবে উপলব্ধি করতে সহায়তা করে।
৭. মহাবিশ্বের অসীম শক্তির সাথে সংযোগ স্থাপন করে-
শিব কৈলাস পর্বত, গঙ্গা নদী এবং প্রকৃতির সাথে যুক্ত। মহা শিবরাত্রি উদযাপন শিশুদের প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সম্মান গড়ে তুলতে সহায়তা করে, যা তাদের পরিবেশ রক্ষার জন্য অনুপ্রাণিত করে।
মহা শিবরাত্রির উপাসনায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিশুরা আধ্যাত্মিক সচেতনতা, মানসিক শক্তি এবং তাদের আভ্যন্তরীণ সত্তার সাথে গভীর সংযোগ স্থাপন করতে পারে, যা তাদের সারাজীবনের জন্য উপকারে আসে।