rupkatha-png
চীনের বাচ্চা দের কি ভাবে পড়াশোনা করানো হয় ?

চীনের শিক্ষা ব্যবস্থা বেশ কঠোর এবং কাঠামোবদ্ধ। শিশুরা সাধারণত ছোটবেলা থেকেই শৃঙ্খলাবদ্ধ শিক্ষার মধ্যে বেড়ে ওঠে। এখানে বাচ্চাদের পড়াশোনার কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো—

১. প্রাথমিক শিক্ষা (小学 - শাও শ্যুয়ে)

  • সাধারণত ৬-৭ বছর বয়সে স্কুল শুরু হয় এবং এটি ৬ বছর ধরে চলে।
  • বাচ্চারা প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস করে, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়ির কাজ (হোমওয়ার্ক) অনেক বেশি থাকে।
  • গণিত, চীনা ভাষা (ম্যান্ডারিন), বিজ্ঞান, ইতিহাস, এবং শারীরিক শিক্ষার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়।
  • ইংরেজি শেখানো শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যবর্তী সময়ে।
  •  

২. মাধ্যমিক শিক্ষা (中学 - ঝোং শ্যুয়ে)

  • দুটি ধাপে বিভক্ত:
    • নিম্ন মাধ্যমিক (Junior Middle School, 初中 - চু ঝোং): ৩ বছর
    • উচ্চ মাধ্যমিক (Senior Middle School, 高中 - গাও ঝোং): ৩ বছর
  • এই পর্যায়ে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি বেড়ে যায় এবং ছাত্র-ছাত্রীরা গাওকাও (高考 - Gaokao) পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • দিনে ১০-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত পড়াশোনা করা সাধারণ বিষয়।
  • টিউটরিং এবং অতিরিক্ত ক্লাসের প্রচলন ব্যাপক।
  •  

৩. কঠোর পড়াশোনার পরিবেশ

  • চীনে স্কুলের পরিবেশ অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। শিক্ষকরা সাধারণত শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কড়া হন।
  • পরীক্ষাভিত্তিক মূল্যায়নের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, এবং ছাত্রদের নিয়মিত পরীক্ষা নেওয়া হয়।
  • গাওকাও পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অনেক শিক্ষার্থী সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে।
  •  

৪. প্রযুক্তি ও আধুনিক শিক্ষা

  • চীনে আধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।
  • অনলাইন শিক্ষার প্রচলন বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে AI এবং স্মার্ট লার্নিং টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়।
  • শিক্ষার্থীরা WeChat, DingTalk, এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পড়াশোনা করে।
  •  

৫. অতিরিক্ত পাঠক্রম এবং সাংস্কৃতিক শিক্ষা

  • বাচ্চাদের বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমেও (extra-curricular activities) অংশগ্রহণ করতে বলা হয়, যেমন— সঙ্গীত, চিত্রকলা, মার্শাল আর্ট (কুংফু), ওলিম্পিয়াড গণিত, রোবোটিক্স ইত্যাদি।
  • বাচ্চাদের নৈতিক শিক্ষা ও দেশপ্রেম শেখানোর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি চালু থাকে।
  •  

৬. পারিবারিক ভূমিকা

  • অভিভাবকরা শিশুদের পড়াশোনার প্রতি অত্যন্ত মনোযোগী এবং অনেক সময় বাচ্চাদের বাড়তি পড়াশোনার জন্য বাড়িতে প্রাইভেট টিউটর রাখেন।
  • সপ্তাহান্তে অতিরিক্ত ক্লাস করা খুব সাধারণ বিষয়।
  •  

  আর একটু বিস্তারিত ভাবে ওপরের বিষয় গুলো আলোচনা করা যাক    

 

১. চীনের শিক্ষা ব্যবস্থা (Education System in China)

চীনের শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত তিনটি প্রধান ধাপে বিভক্ত:

  1. প্রাথমিক শিক্ষা (Primary Education - 小学, শাও শ্যুয়ে) — ৬ বছর
  2. মাধ্যমিক শিক্ষা (Secondary Education - 中学, ঝোং শ্যুয়ে) — ৬ বছর
    • কনিষ্ঠ মাধ্যমিক (Junior Middle School - 初中, চু ঝোং) — ৩ বছর
    • উচ্চ মাধ্যমিক (Senior Middle School - 高中, গাও ঝোং) — ৩ বছর
  3. উচ্চ শিক্ষা (Higher Education - 大学, দা শ্যুয়ে)
  4.  

২. প্রাথমিক শিক্ষা (Primary Education - 小学, শাও শ্যুয়ে)

  • সাধারণত ৬ বা ৭ বছর বয়সে শুরু হয় এবং এটি বাধ্যতামূলক।
  • শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে থাকতে হয়।
  • প্রধান বিষয়:
    • ম্যান্ডারিন চীনা ভাষা (官方语言 - সরকার স্বীকৃত ভাষা)
    • গণিত (অত্যন্ত কঠোর এবং যুক্তিনির্ভর)
    • ইংরেজি (প্রাথমিক স্তরে শেখানো হয়, তবে উচ্চ স্তরে জোর দেওয়া হয়)
    • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
    • নৈতিকতা ও সমাজবিজ্ঞান (নৈতিক শিক্ষা ও দেশপ্রেম শেখানো হয়)
    • শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া (কুংফু, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন)

পড়াশোনার পদ্ধতি:

  • পাঠ্যবই এবং মুখস্থভিত্তিক শিক্ষার প্রচলন বেশি।
  • হোমওয়ার্কের চাপ অনেক বেশি।
  • অভিভাবকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তারা নিয়মিত সন্তানদের পড়াশোনার খোঁজ রাখেন।
  •  

৩. মাধ্যমিক শিক্ষা (Secondary Education - 中学, ঝোং শ্যুয়ে)

চীনের মাধ্যমিক শিক্ষা দুই ভাগে বিভক্ত—

নিম্ন মাধ্যমিক (Junior Middle School - 初中, চু ঝোং) [৭ম-৯ম শ্রেণি]

  • এটি বাধ্যতামূলক এবং সাধারণত ১২-১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা এই স্তরে পড়ে।
  • প্রধান বিষয়: গণিত, চীনা ভাষা, ইংরেজি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল, কম্পিউটার বিজ্ঞান, এবং শারীরিক শিক্ষা।
  • শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ ঘণ্টা পড়াশোনা বাধ্যতামূলক।
  • ছাত্রদের পরীক্ষা ও মূল্যায়ন অত্যন্ত কঠোরভাবে করা হয়।

উচ্চ মাধ্যমিক (Senior Middle School - 高中, গাও ঝোং) [১০ম-১২তম শ্রেণি]

  • এই পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
  • প্রধানত দুটি বিভাগ থাকে—
    1. Science (理科 - লি কে): গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান
    2. Arts (文科 - ওয়েন কে): ইতিহাস, রাজনীতি, ভূগোল

পড়াশোনার ধরণ:

  • শিক্ষার্থীরা দিনে ১৪-১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত পড়াশোনা করে।
  • পরীক্ষাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা (Examination-Oriented System)।
  • গাওকাও (Gaokao) বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  •  

৪. উচ্চশিক্ষা (Higher Education - 大学, দা শ্যুয়ে)

  • গাওকাও পরীক্ষায় ভালো ফল করা শিক্ষার্থীরাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পায়।
  • চীনের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো:
    • Peking University (北京大学)
    • Tsinghua University (清华大学)
    • Fudan University (复旦大学)
  • প্রকৌশল, চিকিৎসা, তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যবসা প্রশাসন (MBA) এবং গবেষণাধর্মী শিক্ষা ব্যবস্থা জনপ্রিয়।
  •  

৫. শিক্ষাদানের পদ্ধতি (Teaching Methods in China)

চীনে শিক্ষাদানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য:

কঠোর শৃঙ্খলা ও নিয়মনীতি

  • প্রতিটি স্কুলে ছাত্রদের জন্য কড়া নিয়ম মেনে চলা বাধ্যতামূলক।
  • সময়মতো স্কুলে আসা, ইউনিফর্ম পরা, এবং শ্রেণিকক্ষে শৃঙ্খলা বজায় রাখা আবশ্যক।
  • শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল থাকতে হয়।

প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা (Technology-Based Learning)

  • AI, Big Data, এবং অনলাইন শিক্ষার ব্যাপক ব্যবহার।
  • WeChat এবং DingTalk-এর মতো অ্যাপের মাধ্যমে হোমওয়ার্ক ও ক্লাস পরিচালনা করা হয়।
  • শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল স্মার্ট ক্লাসরুম চালু করা হয়েছে।

পরীক্ষা-নির্ভর শিক্ষা (Examination-Oriented Education)

  • শিক্ষার্থীদের সাফল্য মূলত পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।
  • গাওকাও পরীক্ষার কারণে ছাত্রদের উপর চাপ অনেক বেশি থাকে।
  • মুখস্থবিদ্যা এবং অনুশীলনভিত্তিক শিক্ষা প্রচলিত।
  •  

৬. অতিরিক্ত পাঠক্রম ও সামাজিক শিক্ষা (Extra-Curricular Activities & Social Learning)

চীনে শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র একাডেমিক বিষয়েই নয়, বরং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ করতে হয়:

  • মার্শাল আর্ট (Kung Fu, Wushu)
  • চিত্রকলা ও সঙ্গীত (Calligraphy, Painting, Traditional Music)
  • বিজ্ঞান মেলা ও গণিত অলিম্পিয়াড
  • প্রেজেন্টেশন ও পাবলিক স্পিকিং (Public Speaking & Debate)
  • ভলান্টিয়ার ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম
  •  

৭. চীনের শিক্ষা ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা

যদিও চীনের শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত, তবে এর কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:

  1. অত্যধিক প্রতিযোগিতা: শিক্ষার্থীদের উপর প্রচণ্ড চাপ থাকে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে।
  2. সৃজনশীলতার অভাব: মুখস্থভিত্তিক শিক্ষা এবং পরীক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কারণে সৃজনশীল চিন্তাভাবনার ঘাটতি দেখা যায়।
  3. বাড়তি ক্লাস ও টিউশন: অধিকাংশ শিক্ষার্থী স্কুলের পরও অতিরিক্ত টিউশন নেয়, যা তাদের শৈশবের স্বাধীনতা কমিয়ে দেয়।