ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) মহাকাশ গবেষণায় নতুন নতুন সাফল্যের দ্বার উন্মোচন করছে। গগনযান মিশনের অংশ হিসেবে, ব্যোমমিত্র নামের এক হিউম্যানয়েড রোবট তৈরি করা হয়েছে, যা ভারতের প্রথম মহাকাশচারী পাঠানোর আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভূমিকা পালন করবে। যদিও এটি একটি রোবট, তবে এটি ভবিষ্যতে ভারতের প্রথম মহাকাশচারী পাঠানোর একটি বড় পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
ব্যোমমিত্র: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক অনন্য উদাহরণ
ব্যোমমিত্র নামটি দুটি সংস্কৃত শব্দ থেকে এসেছে – "ব্যোম" (অর্থাৎ আকাশ) এবং "মিত্র" (অর্থাৎ বন্ধু)। এই নামই প্রকাশ করে যে এটি মহাকাশ অভিযানে মানুষের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। ইসরো ব্যোমমিত্রাকে এমনভাবে ডিজাইন করেছে যাতে এটি মানুষের মতো দেখতে হয় এবং বিভিন্ন কাজ করতে সক্ষম হয়।
ব্যোমমিত্রের কার্যক্ষমতা
ব্যোমমিত্রের উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- মহাকাশযানের সিস্টেম পর্যবেক্ষণ করা: মহাকাশযানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে সক্ষম।
- লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম পরীক্ষা করা: মহাকাশে মানুষ পাঠানোর আগে এই সিস্টেমগুলো কতটা কার্যকরী তা পরীক্ষা করবে।
- মহাকাশচারীদের সহায়তা করা: ভবিষ্যতে মানব মহাকাশ অভিযানের সময় এটি মহাকাশচারীদের সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে।
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া: এটি সেন্সর ও সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।
গগনযান মিশনের মাধ্যমে ভারত প্রথমবারের মতো নিজস্ব প্রযুক্তিতে মানুষকে মহাকাশে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু এই মিশনের আগে মহাকাশযানের কার্যকারিতা, নিরাপত্তা ও জীবন রক্ষার প্রযুক্তি পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। এখানেই ব্যোমমিত্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এটি গগনযান মিশনের অনুশীলন পর্যায়ে মহাকাশে পাঠানো হবে, যাতে মানুষের জন্য এই অভিযান নিরাপদ করা যায়।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
ব্যোমমিত্র শুধু একটি পরীক্ষামূলক রোবট নয়, এটি ভারতের ভবিষ্যৎ মহাকাশ গবেষণার পথপ্রদর্শক। ভবিষ্যতে আরও উন্নত হিউম্যানয়েড রোবট তৈরি হতে পারে, যা মহাকাশ অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এমনকি একদিন হয়তো ব্যোমমিত্রের মতো রোবটই প্রথমে চাঁদ বা মঙ্গলে অভিযানে যাবে!
ব্যোমমিত্র ভারতের মহাকাশ গবেষণার এক যুগান্তকারী উদ্ভাবন। যদিও এটি এখনও রোবট, তবে এটি ভারতের প্রথম মহাকাশচারী পাঠানোর পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ইসরোর এই সাফল্য একদিন ভারতকে মহাকাশ অভিযানের প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে স্থান করে দেবে, যেখানে মানুষ এবং রোবট একসঙ্গে মহাকাশের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
