rupkatha-png
ভারতের মহাকাশ অভিযানের ইতিহাস
ভারতের মহাকাশ অভিযান শুরু হয় ১৯৬২ সালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কমিটি ফর স্পেস রিসার্চ (INCOSPAR) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এরপর ১৯৬৯ সালে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ISRO) প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ভারতের মহাকাশ গবেষণা ও অভিযানের মূল সংস্থা হিসেবে কাজ করে। ভারতের মহাকাশ অভিযানের কিছু উল্লেখযোগ্য মাইলস্টোন এবং প্রকল্প নিচে দেওয়া হল:

১. আর্যভট্ট (Aryabhatta)

  • প্রথম ভারতীয় স্যাটেলাইট: ১৯৭৫ সালে ভারতের প্রথম স্যাটেলাইট আর্যভট্ট উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় উৎক্ষেপিত হয়েছিল।
 

২. এসএলভি (SLV) এবং পিএসএলভি (PSLV)

  • এসএলভি-৩ (SLV-3): ১৯৮০ সালে ভারত প্রথম সফলভাবে নিজস্ব স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (SLV) ব্যবহার করে রোহিণী স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে।
  • পিএসএলভি (PSLV): পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (PSLV) ভারতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য রকেট, যা বহু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি চন্দ্রযান-১ এবং মঙ্গলযান উৎক্ষেপণেও ব্যবহৃত হয়েছে।
 

৩. চন্দ্রযান-১ (Chandrayaan-1)

  • প্রথম চন্দ্র অভিযান: ২০০৮ সালে চন্দ্রযান-১ চাঁদের উদ্দেশ্যে উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি চাঁদের পৃষ্ঠে জল অণুর উপস্থিতি শনাক্ত করে, যা একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার ছিল।
 

৪. মঙ্গলযান (Mangalyaan)

  • প্রথম মঙ্গল অভিযান: ২০১৩ সালে ভারত মঙ্গলযান উৎক্ষেপণ করে এবং ২০১৪ সালে এটি মঙ্গলের কক্ষপথে সফলভাবে প্রবেশ করে। এটি ভারতকে মঙ্গলে পৌঁছানো প্রথম এশীয় দেশ এবং প্রথম প্রচেষ্টাতেই সফল হওয়া একমাত্র দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
 

৫. চন্দ্রযান-২ (Chandrayaan-2)

  • দ্বিতীয় চন্দ্র অভিযান: ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণ করা হয়। যদিও ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের পৃষ্ঠে সফলভাবে অবতরণ করতে পারেনি, অরবিটারটি সফলভাবে কাজ করছে এবং তথ্য পাঠাচ্ছে।
 

৬. গগনযান (Gaganyaan)

  • মহাকাশে মানব অভিযান: গগনযান হল ভারতের প্রথম মানব মহাকাশ অভিযান প্রকল্প। এটি ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতীয় নভোচারীদের মহাকাশে পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করছে।
 

৭. এডিএস-০১ মিশন (Aditya-L1)

  • সূর্য অভিযান: এডিএস-০১ মিশন হল সূর্য পর্যবেক্ষণের জন্য ভারতের প্রথম মিশন। এটি সূর্যের করোনা এবং সৌর ঝড় সম্পর্কে গবেষণা করবে।
 

৮. নেভিগেশন স্যাটেলাইট (NavIC)

  • ভারতের নিজস্ব নেভিগেশন সিস্টেম: নেভিগেশন উইথ ইন্ডিয়ান কনস্টেলেশন (NavIC) হল ভারতের নিজস্ব স্যাটেলাইট-ভিত্তিক নেভিগেশন সিস্টেম, যা জিপিএস-এর বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
 

৯. স্মল স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (SSLV)

  • ক্ষুদ্র স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ: SSLV হল একটি নতুন লঞ্চ ভেহিকল, যা ছোট স্যাটেলাইটগুলিকে কম খরচে উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম।
 

১০. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

  • ISRO নাসা, ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ESA), এবং অন্যান্য দেশের মহাকাশ সংস্থাগুলির সাথে সহযোগিতা করে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, নাসার সাথে চন্দ্রযান-১ এবং মঙ্গলযান মিশনে সহযোগিতা করা হয়েছে।
 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:

  • চন্দ্রযান-৩: চন্দ্রযান-২-এর ব্যর্থতা কাটিয়ে চন্দ্রযান-৩ মিশনের মাধ্যমে আবার চাঁদে ল্যান্ডার পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
  • মঙ্গলযান-২: মঙ্গলগ্রহে দ্বিতীয় অভিযানের পরিকল্পনা চলছে।
  • শুক্র অভিযান: শুক্র গ্রহে অভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে।
ভারতের মহাকাশ অভিযানগুলি বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ISRO-এর সাফল্য ভারতকে মহাকাশ গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *